ডাহুক পাখির ডাক

গর্ব (অক্টোবর ২০১১)

আলমগীর মাহমুদ
  • ১৩
  • 0
  • ৫৬
খুব সকালেই ঘুম ভেঙ্গে গেল সুমনের। বাইরে কি যেন একটা আওয়াজ শুনে বেরিয়ে গেল সে। বের হতেই তার চোখ কপালে উঠল। ভরাট করা হচ্ছে পাশের ডোবাটি। যেখানে কয়েক বছর যাবত বাস করছিল ডাহুক পাখি। চারদিকের গাছগুলোতে পাখিরাও বাস করতো। ডোবার ডাহুক পাখির ডানা-ঝাপটানির শব্দ শুনতে পেতো সে। সকালে শুনতে পেতো ডাহুক পাখির ডাক। আর শুনতে পাবেনা সে। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল সুমনের। সে জানে এখন আর কিছুই করা যাবেনা। আটকানো যাবেনা ওদের। বেশ কয়েকদিন যাবত এ ডোবাটি ভরাট করার চেষ্টা করা হচ্ছে, পাইপ টানা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় সবগুলো কাজই সেরে ফেলা হয়েছে। ডোবাটি সুমনদের। তাই সুমন তার বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিল কেন ডোবাটি ভরাট করা হচ্ছে

- ডোবাটি রেখে কোন লাভ নেই তাই ভরাট করা হচ্ছে
- কেন লাভ নেই কেন ?
- অযথা প্রশ্ন করছো কেন ? ডোবাটি রেখে কি লাভ তুমিই বল ?
- অনেক লাভ, এখানে বাস করে ডাহুক পাখি, আশে-পাশের গাছ গুলিতে বাস করে কত রকমের পাখি। পাখির কিচির-মিচির শব্দ তার অনেক প্রিয়
- ডাহুক পাখি বাস করছে বলে ডোবাটি ভরতে পারবো না
- না, তুমি ভরতে পারবে না
- কেন ভরতে পারবো না কেন ?
- তাহলে ডাহুক পাখিগুলো থাকবে কোথায়, যাবে কোথায় ওরা
- যেখানে মানুষ থাকতে পারেনা, মানুষের থাকার জায়গা নেই, সেখানে ডাহুক পাখির থাকার কথা আসছে কেন ?
- আসছে এ জন্য যে, মানুষের থাকার জন্য বেশী জায়গার প্রয়োজন, আর ডাহুক পাখিটির প্রয়োজন ছোট্ট একটি বাসা, যা সে এই ডোবাতেই বেঁধেছিলো। তুমি এটা ভরাট করতে পারোনা বাবা
- এটা ভরাট করলে এখানে বাড়ি নির্মাণ করতে পারবো অথবা এই জায়গাটা খুব ভাল দামে বিক্রি করতে পারবো, সেটা অনেক লাভের, তোমার ডাহুক পাখির জন্য কি আর এসব বসে থাকবে

সেদিনই সুমন বুঝেছিল ডাহুক পাখিগুলোকে বোধহয় আর বাঁচানো যাবেনা। কিন্তু কি করবে সে, কি তার করার আছে। আমরা তো আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে সব কিছুই ধ্বংস করে দিচ্ছি। ছোট্ট একটি ডাহুক পাখি ধ্বংস করে দিলে কি আর ক্ষতি ? আমাদের দেশের সবুজ হয়তো একসময় সবুজ থাকবে না, মরুভূমি হবে। তখন হয়তো পানির জন্য হাহাকার করতে হবে। আমাদের দেশ নিয়ে আমরা যে গর্ব করি হয়তো সে গর্ব একদিন হারিয়ে যাবে ভরাট করা ডোবাটির মত। আমাদের চির সবুজ গ্রাম নিয়ে আমরা যে গর্ব করি তাও হয়তো একদিন হারিয়ে যাবে ইট-পাথরের ভিড়ে। বিষণ্ণ মনে সুমন চলে আসে ঘরে। কারণ সে যানে তার আর কিছুই করার নেই এখানে। তবুও যদি ডাহুক পাখিগুলোকে বাঁচানো যেত। কোথায় যাবে ওরা এখন। আশে-পাশে এমন কোন গাছ নেই কিংবা ডোবা নেই যেখানে গিয়ে বসত গড়বে ওরা। সুমনের খুব ইচ্ছে হয় ওদের জন্য একটি বাসা গড়ে দিতে। খুব ইচ্ছে হয় ওদের ধরে এনে আদর করতে, সান্ত্বনা দিতে। কিন্তু ওরাতো অনেক আগেই এখান থেকে চলে গেছে। বুঝে গেছে এখানে আর থাকা যাবেনা। মানুষ ধ্বংস করে দিচ্ছে ডাহুকের থাকার ঘর। মানুষ ধ্বংস করে দিচ্ছে নিজেদের পরিবেশ।

সুমন জানে সে আর কখনোই ডাহুক পাখির ডাক শুনতে পাবেনা। ডোবাটি থেকে যে মৃদু হিমেল বাতাস আসতো সেটাও পাবেনা। এখন শুধু পাবে খটখটে বালু মাখা তপ্ত রোদ আর গরমের ডানা-ঝাপটানি।

সুমন কি করবে বুঝে উঠতে না পেরে বেরিয়ে গেল বাসা থেকে। যাবার সময় আরো একবার উকি দিল ডোবাটায়। দেখলো সেখানে অনেকেই দাঁড়িয়ে। সবাই মুখেই তৃপ্তির হাসি। সবার মুখ খুবই উজ্জ্বল। কারণ অনেক বড় একটা জায়গা পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে অট্টালিকা হবে, মানুষ থাকবে সেখানে।

সুমন বেরিয়ে গেল বাসা থেকে। কোথায় যাবে সে জানেনা। তার দু:খটা তার বুকেই রয়ে গেল। কেউ তার দু:খটা বুঝলোনা। হাটতে হাটতে কোথায় চলে গেল সুমন নিজেও জানেনা। এদিকে সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেল, দুপুর গড়িয়ে বিকেল কিন্তু সুমন ঘরে ফিরলনা। সুমনের বাবা-মা, ভাই চিন্তায় অস্থির হয়ে গেল। ছেলে কোথায় গেল কেউ বলতে পারছেনা। সবাই ভাবলো হয়তো সন্ধ্যার আগেই চলে আসবে। কিন্তু সন্ধ্যা গড়িয়ে যখন রাত হলো তখন সবার মধ্যে চিন্তার মাত্রাটা বেড়ে গেল। সকল আত্মীয় আর বন্ধুদের বাসায় খোঁজা হলো, কোথাও নেই। সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজা হলো কোথায় পাওয়া গেলনা সুমনকে। এবার খোঁজা শুরু হলো। চারদিকে মাইকিং এর ব্যবস্থা করা হলো। কোথাও নেই, কোথাও নেই। শুরু হয়ে গেল কান্না। মায়ের বুক ফাটা চিৎকার। সবাই যখন এমন পরিস্থিতিতে ঠিক তখনই সুমন বাসায় এলো। বাসায় ঢুকে সরাসরি চলে গেল নিজের ঘরে। কারো সঙ্গে কোন কথা বললোনা। মা ঘরে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো কিরে কোথায় গিয়েছিলি, আমরা তোর জন্য চিন্তায় মরে যাচ্ছি

- আমি কোথাও যাইনি
- কোথাও যাইনি মানে, তুই তো কখনো এমন রাত করে বাড়ি ফিরিস ?
- তোমরা আমার থাকার পরিবেশ নষ্ট করে দিয়েছ সেজন্য আমি বেড়িয়ে গিয়েছিলাম
- তোর থাকার পরিবেশ নষ্ট করে দিচ্ছি মানে ?
- তোমরা ডোবাটা ভরাট করেছো, পরিবেশটা নষ্ট হলোনা
- ডোবাটা তো আমাদের ভালর জন্যই ভরাট করা হয়েছে, ওই পচা ডোবাটি দিয়ে কি হতো ?
- ঐইটা পাঁচা ডোবা না, ঐ ডোবাটা আমার একটা প্রিয় জায়গা ছিল, আমি গর্ব করতাম আমার বাড়ির পাশে ডোবা আছে, যেখান থেকে ডাহুক পাখির ডাক আসে, যেখান থেকে স্নিগ্ধ হিমেল বাতাস আসে, যেখান থেকে কচুরি ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়, এসব আমি আর কখনো দেখবো না, আমি আর কখনোই গর্ব করতে করে আমার বন্ধুদের কাছে বলতে পারবোনা।

সুমনের বুকটা ফেটে কান্না চলে আসে। মায়ের বুকে মাথা রেখে ডুকরে কেঁদে ওঠে। রাত গভীর হয়, সুমন শূন্য দৃষ্টি দিয়ে চেয়ে থাকে ভরাট ডোবাটার দিকে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিজানুর রহমান রানা আমরা তো আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে সব কিছুই ধ্বংস করে দিচ্ছি। ছোট্ট একটি ডাহুক পাখি ধ্বংস করে দিলে কি আর ক্ষতি ? আমাদের দেশের সবুজ হয়তো একসময় সবুজ থাকবে না, মরুভূমি হবে। তখন হয়তো পানির জন্য হাহাকার করতে হবে। আমাদের দেশ নিয়ে আমরা যে গর্ব করি হয়তো সে গর্ব একদিন হারিয়ে যাবে ভরাট করা ডোবাটির মত। আমাদের চির সবুজ গ্রাম নিয়ে আমরা যে গর্ব করি তাও হয়তো একদিন হারিয়ে যাবে ইট-পাথরের ভিড়ে।---------------গল্পটিতে শেখার আছে অনেকব কিছু। গল্পকারকে অভিবাদন।
আশা এ ধরণের গল্প অনেক বড় না হলে থমকে যাই। কারণ হৃদয়ের ক্ষুধা হঠাৎ বেড়ে যায়। তবু অল্পের মাঝে কল্পনার চোখ দিয়ে অনেক কিছুই খুঁজে বের করে একটু অতীতে চলে যেতে পেরেছি। কারণ; আমার মিঠু (টিয়া পাখি) স্মৃতির পাতা থেকে আজো মুছে যায়নি। প্রতিদিন সকালে কলেজে যাবার সময় মিঠুকে গাছ থেকে ডেকে হাতে নিতাম। তারপর কাঁধে বসিয়ে সাইকেল চালিয়ে অনেক দুর চলে যেতাম। এ রকম করতে করতে তার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। আমি না ডাকলেও কলেজে যাবার সময় সাইকেলে চড়ার জন্য কাঁদে বসত। কিন্তু দু:খের বিষয় সিডরের রাতে রান্নাঘরটি ভেঙ্গে গেলে মিঠু প্রাণ হারায়। এটা নিয়ে গল্পও লিখা আছে। লেখককে ধন্যবাদ। সাথে শুভকামনা।
চৌধুরী ফাহাদ ভাবনার বিন্যাস ভাল লেগেছে।
মোঃ আক্তারুজ্জামান লেখাটি আমার কেন জানি নিস্পাপ চিন্তার ফসল মনে হলো- লেখকের প্রতি অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো|
sakil ভাল হয়েছে । লিখতে থাকো নিয়মিত।
আহমেদ সাবের অসাধারন গল্প। অনন্য আইডিয়া। গল্পকারকে শুভেচ্ছা।
ম্যারিনা নাসরিন সীমা পশু পাখিকে যারা ভালবাসতে পারে তারা মানুষকে অবলীলায় ভালবাসে । ভাল লাগলো ।
মামুন ম. আজিজ ক্ষুদ্র ক্ষনের সুন্দর অনুভূতি

১৬ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪